কম্পিউটার কী? কম্পিউটার কত প্রকার? জেনে নিন বিস্তারিত

কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কাকে বলে?

কম্পিউটার হল একটি গণনাকারী ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, যে ডিভাইস ব্যবহার করে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং বিভিন্ন ধরণের তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারের মূল উদ্দেশ্য হলো ডেটা ইনপুট থেকে আউটপুট তৈরি করা এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। কম্পিউটার মূলত বাইনারি সংখ্যা জিরো (0) এবং ওয়ান (1) এর মাধ্যমে ইনপুট এবং আউটপুট প্রদান করে থাকে।

সূচিপত্রঃ

কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে?

কম্পিউটারের জনক হলেন চার্লস ব্যাবেজ। ১৮৩৭ সালে প্রথম প্রোগ্রামেবল কম্পিউটার সম্পর্কে তিনি ধারণা দেন। আধুনিক কম্পিউটারের মূল ভিত্তি স্থাপন করেন জন ভন নিউম্যান, যিনি ১৯৪৫ সালে ‘stored-program concept’ আবিষ্কার করেন।কিন্তু উইন্ডোজ সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত কম্পিউটারে তেমন ব্যবহার ছিল না, উইন্ডোজ সৃষ্টি হওয়ার পরে সমগ্র বিশ্বে কম্পিউটার জনপ্রিয়তা লাভ করে।

কম্পিউটারের যাত্রা কবে শুরু হয়?

১৯৪০ দশকের শুরুর দিকে কম্পিউটার ছিল একটি হিসাব গণনাকারী যন্ত্র। প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার, ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer), ১৯৪৫ সালে আবিষ্কার হয়েছিল। এরপরে যত দিন যেতে থাকে, কম্পিউটারের রেভুলেশন শুরু হয় এবং বিভিন্ন প্রজন্মের মাধ্যমে আজকের ডিজিটাল কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়েছে।

কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয়?

শুরুর দিক দিয়ে কম্পিউটার শুধুমাত্র একটি হিসাব গণনাকারী যন্ত্র হলেও বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করে যে কোন কাজ সমাধান করা যায়।বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করে ডেটা প্রসেসিং এবং স্টোরেজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন ও অ্যানিমেশন, গেমিং, অফিসের কাজ, যেমন: ডকুমেন্টেশন, স্প্রেডশীট তৈরি, বিজ্ঞান ও গবেষণার কাজে, শিক্ষা ও ই-লার্নিং ইত্যাদির যেকোনো কাজ অনায়াসে সম্পন্ন করা যায়।

কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

যতদিন যেতে থাকে কম্পিউটারের গঠন বিস্তার লাভ করতে থাকে, গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে, কম্পিউটার তিন প্রকার:

১) এনালগ কম্পিউটার: এনালগ কম্পিউটার ব্যবহার করে ক্রমাগত ডেটা প্রসেসিং এবং বিভিন্ন শারীরিক পরিমাপ, যেমন তাপমাত্রা, চাপ, ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।

২) ডিজিটাল কম্পিউটার: ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার করে ডিসক্রিট ডেটা প্রসেস এবং জটিল গণনা সম্পাদন করা যায়।

৩) হাইব্রিড কম্পিউটার:হাইব্রিড কম্পিউটার মূলত এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ রূপ।

ডিজিটাল কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

বর্তমানে আমরা যে সকল ডেক্সটপ, ল্যাপটপ ব্যবহার করি সেগুলো হলো ডিজিটাল কম্পিউটার। ডিজিটাল কম্পিউটার আকার-আয়তন ও ব্যবহারের ভিত্তিতে চার প্রকার:

১) সুপার কম্পিউটার: সুপার কম্পিউটার অত্যন্ত শক্তিশালী ও উচ্চ গতি সম্পন্ন কম্পিউটার, যা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো  বৃহৎ প্রসেসিং এ ব্যবহার করে।

২) মেইনফ্রেম কম্পিউটার: মেইনফ্রেম কম্পিউটার সুপার কম্পিউটারের মত পাওয়ারফুল না হলেও ছোট বড় অনেক কোম্পানি নিজেদের ডাটা স্টোর করার জন্য মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করে।

৩) মিনি কম্পিউটার: মিনি কম্পিউটার বলতে মূলত কোন মেশিনকে বোঝানো হয় যেগুলো মাঝারি আকারের ডেটা প্রসেসিং করে।

৪) মাইক্রো কম্পিউটার: আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহৃত কম্পিউটার এইগুলোকে মাইক্রো কম্পিউটার বলে, যেমন: ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক মূলত এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের আন্তঃসংযোগ, যা এক কম্পিউটার হতে অন্য কম্পিউটারে প্রটোকল ব্যবহার করে সংযোগ স্থাপন করা হয়।  একই নেটওয়ার্কের যত ডিভাইস যুক্ত হবে সেই নেটওয়ার্ক তত বৃহৎ এবং বিস্তৃত হবে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার ও কি কি?

বিভিন্ন প্রকার ভেদের উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কের ধরন ভিন্ন হতে পারে:

ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে:

১) LAN (Local Area Network): লোকাল এরিয়ার নেটওয়ার্ক মূলত একটি ছোট ভৌগলিক এলাকা মধ্যে গড়ে তোলা যেতে পারে, যেমন: অফিস বা বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ।

২) MAN (Metropolitan Area Network): যেকোনো বৃহৎ এলাকা কিংবা শহরজুড়ে এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা যেতে পারে।

৩) WAN (Wide Area Network): ওয়ান এরিয়া নেটওয়ার্ক মূলত দেশ হতে দেশ আন্তঃসংযোগ কানেকশনের মাধ্যমে স্থাপিত হয়, যা একই নেটওয়ার্কে সকল ডিভাইস সংযুক্ত হয়। বর্তমানে আমরা সমগ্র বিশ্বে সংযোগ স্থাপন করার জন্য আন্ত সংযোগে Wide এরিয়ার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হই। যেটাকে আমরা সাধারণ ভাষায় ইন্টারনেট বলে থাকি।

ব্যবহারের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক:

১) ইন্টারনেট:বর্তমানে সমস্ত বিশ্বে একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়।

২) ইন্ট্রানেট: এই ধরনের নেটওয়ার্ক মূলত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

৩) এক্সট্রানেট: ইন্ট্রানেটের মতো, এটি মূলত কিছু নির্বাচনকারী ব্যক্তি ব্যবহার করার জন্য এক্সেস পায়।

কম্পিউটার কিভাবে আমাদের জীবনকে সহজ করে?

যেহেতু কম্পিউটারের মাধ্যমে আমরা আমাদের যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারি তাই কম্পিউটার আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আপনি যদি একজন শিক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্রদের প্রেজেন্টেশন ক্লাস তৈরির জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা প্রয়োজন, অনলাইনে ক্লাস করানোর জন্য কম্পিউটার নামক ডিজিটাল ডিভাইসের প্রয়োজন। একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের প্রয়োজন, এই সব কিছু কম্পিউটারের অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় বলা যায় বর্তমান পৃথিবীতে কম্পিউটার ছাড়া আমাদের জীবনমান উন্নত করার চিন্তা করা যায় না।

কিভাবে আমরা উন্নত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারি?

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক দীর্ঘমেয়াদী কোর্স আছে যেগুলো কমপ্লিট করার মাধ্যমে আপনি কম্পিউটার সম্পর্কে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। যদি নিজ উদ্যোগে কম্পিউটার শিখতে চান তাহলে নিজের পার্সোনাল কম্পিউটারে প্রতিদিন এক ঘণ্টা অনুশীলন করুন তাহলে কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

কম্পিউটার ব্যবহার করে কিভাবে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করব?

আপনি যদি কম্পিউটারকে ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে চান প্রথমে আপনাকে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে হবে। ব্যবসা পরিচালনা করার সমস্ত উপায় সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কে ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।

অতিরিক্ত সময় কম্পিউটার ব্যবহার করলে কোন সমস্যা হবে?

অবশ্যই অতিরিক্ত সময় কম্পিউটার ব্যবহার করা নিজের মস্তিষ্ক এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একজন সাধারন ব্যক্তি দৈনিক 5 থেকে 8 ঘণ্টার বেশি কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত না। কারণ কম্পিউটারে ক্ষতিকর রশ্মি আপনার মস্তিষ্ক এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। আপনি যদি অতিরিক্ত ডিভাইস আসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে দিন দিন আপনার স্মৃতিশক্তি কমে আসতে থাকবে, দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাবে।

কেমন বাজেটের কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত?

আপনি যদি শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বাজেটের কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন এবং আপনি যদি ব্যবসার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বাজেট নিতে পারেন। এটা মূলত নির্ভর করবে আপনার কাজের উপর আপনি কোন ধরনের কাজ করতে চান। একটা কম্পিউটারের মূলত রেম, রম, হার্ডওয়ারের উপর বেশি মনোযোগ হতে হয়।

বর্তমানে কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কিং ছাড়া ডিজিটাল পৃথিবী চিন্তা করা যায় না। যত দিন যাচ্ছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন নিজের জীবনের চাহিদা অনুযায়ী কম্পিউটারকে একটি নিজের অংশ করে নিয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত কম্পিউটার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা এবং কম্পিউটারকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে লাগানো।

Leave a Comment