কম্পিউটার ভাইরাস হল একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি করে। কম্পিউটার ভাইরাস মূলত প্রোগ্রামগুলির ফাইলের মধ্যে যুক্ত হয়ে সেগুলিকে দূষিত করতে পারে, কম্পিউটার ভাইরাসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করা বা হ্যাক করা যেতে পারে। কম্পিউটার ভাইরাসকে মানুষের শরীরে প্রবাহিত শারীরিক ভাইরাসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, ভাইরাস মূলত স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে এবং ক্ষতি সাধন করে।
সূচিপত্রঃ
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকারভেদ
বর্তমানে কম্পিউটার ভাইরাসের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, দিন দিন নিত্য নতুন আবিষ্কারের ফলে এর প্রকারভেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিচে কয়েকটি ভাইরাসের ধরন উল্লেখ করা হলো:
- ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস: ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস মূলত এক্সিকিউটেবল (.exe) ফাইলগুলির সাথে যুক্ত হয়। যখনই কোন ইউজার (.exe) স্টেশনে ফাইল/ সফটওয়্যার ইনস্টল করে তখনই কম্পিউটারে প্রবেশ করে এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন ফাইল এ প্রবেশ করে ক্ষতি করে।
- বুট সেক্টর ভাইরাস: বুট সেক্টর ভাইরাস হার্ড ড্রাইভের বুট সেক্টরকে নষ্ট করে। এই এই ধরনের ভাইরাস মূলত সি ড্রাইভ এর প্রয়োজনীয় ডেটা নষ্ট করতে ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটার চালু করার সময় এই ভাইরাসটি নিজের সক্ষমতা দেখায়, বুট সেক্টর ভাইরাস আক্রমণের ফলে আপনার কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় ডেটা হারাতে পারেন, হার্ডওয়ার নষ্ট হতে পারে।
- ম্যাক্রো ভাইরাস: ম্যাক্রো ভাইরাস সাধারণত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেল ফাইলের ম্যাক্রোতে যুক্ত হয়ে ফাইল খোলার সময় সক্রিয় হয়। এই ধরনের ভাইরাসের ফলে মাইক্রোসফট অফিসের সফটওয়্যার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং কম্পিউটার বেশি বেশি হ্যাং করে।
- পলিমরফিক ভাইরাস: পলিমরফিক ভাইরাস প্রতিটি নতুন ইনফেকশনের সাথে তাদের কোড পরিবর্তন করে, যা এ ভাইরাসকে শনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। পলিমরফিক ম্যালওয়্যার হল একটি ব্যাঙ্কিং ট্রোজান যা গোপন করার জন্য সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলিকে বিভ্রান্ত করার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য চুরি করে৷
- রুটকিট ভাইরাস: রুটকিট ভাইরাস একটি ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের গভীরে লুকিয়ে থাকে এবং কম্পিউটার সিস্টেমের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রিভিলেজ গ্রহণ করে এই ধরনের ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার ফলে কম্পিউটারের এক্সেস হারাতে পারে।
কম্পিউটার এন্টিভাইরাস কি?
কোন কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা হয় এটি মূলত ঔষধের মতো কাজ করে। এন্টিভাইরাস হলো একধরনের সফটওয়্যার যা কম্পিউটার ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার ইত্যাদির বিরুদ্ধে সিকিউরিটি প্রদান করে থাকে। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কম্পিউটারে স্ক্যানিং করার মাধ্যমে সন্দেহজনক ফাইল বা প্রোগ্রামগুলি চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলোকে ডিলেট করে দেওয়া হয়। এন্টিভাইরাসের কাজ হল ভাইরাসগুলিকে চিহ্নিত করা এবং কম্পিউটারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করা।
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
আপনি যদি কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাহলে যদি আপনার কম্পিউটারে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে, তখন আপনার ধারণা করতে হবে আপনার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। নিচে কিছু লক্ষণ আলোচনা করা হলো।
- অপ্রত্যাশিত পপ-আপ বিজ্ঞাপন দেখা, আপনি যদি কোন সফটওয়্যার কিংবা ফাইল ওপেন করার সময় অপ্রত্যাশিত কোন ওয়েবসাইট লিংক এ চলে যায় অথবা কোন নিউ উইন্ডো ওপেন হয় যেগুলো বিজ্ঞাপন শো করতেছে তাহলে ধরে নিবেন আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস অ্যাটাক করেছে।
- কোন সফটওয়্যার ব্যবহারে ক্ষেত্রে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কাজ না করা।
- ফাইলগুলি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বা ফাইল লক দেখানো।
- কম্পিউটার নিজে নিজে রিস্টার্ট বা শাট ডাউন হওয়া ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করুন।
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে?
কম্পিউটার ভাইরাস আপনার প্রয়োজনীয় ডেটা নষ্ট করে দিতে পারে এবং আপনার কোম্পানি বা সংস্থার যেকোন ডাটা চুরি করার মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে। ডিজিটাল বিজনেস এক্সেস এর মাধ্যমে ব্যবসা হাতিয়ে নিতে পারে। তাছাড়া ব্যাংকিং আর্থিক লেনদেনের ক্ষতি করা যেতে পারে কম্পিউটার ভাইরাসের মাধ্যমে।
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধ্বংস করা বা চুরি হওয়া, যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসার গোপন সূত্র অন্য যে কেউ জেনে নিতে পারে।
- কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়া, কম্পিউটারের স্বাভাবিক গতি নষ্ট করে কাজের বাধা বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
- নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভাইরাস ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের সকল ডাটা চুরি করা কিংবা অন্যান্য ব্যবসায়িক ক্ষতি করা যেতে পারে।
- ব্যাংকিং তথ্য চুরি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি করা যেতে পারে, এটি একটি বড় সমস্যা কারণ সকলেই ডিজিটাল লেনদেনের জন্য সকলে কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ব্যবহার করে থাকি।
আরো পড়ুন- কম্পিউটার কী? কম্পিউটার কত প্রকার? জেনে নিন বিস্তারিত
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়
আপনি যদি আপনার কম্পিউটারটাকে সুরক্ষায় রাখতে চান প্রথমত আপনাকে যে কোন থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পূর্বে ভালো করে দেখে নিবেন সেই ওয়েবসাইটটি ডোমেইন এক্সস্টেশন কি, সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় সফটওয়্যারটি স্ক্যান করে নিবেন, উইন্ডোজের ডিফল্ট ভাইরাস স্ক্যানার অন করে রাখবেন, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন তাহলে আপনি কম্পিউটার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন। নিচে আরো কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
- সর্বদা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার এবং আপডেট রাখা।
- অজানা এবং অবিশ্বস্ত উৎস থেকে সফটওয়্যার, ফাইল ডাউনলোড না করা।
- কোন অপরিচিত ইমেইল খোলার আগে সতর্ক হওয়া কারণ ইমেইলের মাধ্যমে যে কোন হ্যাকার ক্ষতিকর লিংক ব্যবহার করতে পারে।
- পপ-আপ বিজ্ঞাপন থেকে সতর্ক থাকা এবং সেগুলিতে ক্লিক না করা এবং থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটের কুকী ব্লক করে রাখুন।
- নিয়মিতভাবে কম্পিউটারের ব্যাকআপ রাখা, যেন কম্পিউটার আক্রান্ত হলে ডাটা রিসেট করতে পারেন।
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচেতন হওয়া খুবই জরুরী যে কোন কাজ করার পূর্বে সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করা। অপরিচিত কোন ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি না করা। এছাড়াও বিশেষ করে কম্পিউটারে অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে ফাইল ডাউনলোড করা কিংবা কোন সন্দেহজনক ফাইল না খোলা উচিত। একান্তই যদি ফাইল খোলার প্রয়োজন হয় তাহলে ফাইলটি চেক করে নিতে পারেন। আশা করি আপনি আপনার কম্পিউটারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।
আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার উপকারে দিবে কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানার জন্য। যদি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি নতুন কিছু জানতে পারেন কিংবা ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।
অসাধারণ একটি বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনটেক পয়েন্টের এর পক্ষ্য থেকে।