দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও দুধের অপকারিতা

আমরা সবাই জানি দুধ পুষ্টিগুণে ভরপুর। সব ক্ষেত্রেই দুধ খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। দুধ থেকে মেলে আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফ্যাট, জিংক, এবং ভিটামিন ডি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে দুধ আমাদের জন্য কতটা উপকারী। শুধু এই সকল ভিটামিন নয় বরং আরো অনেক ভিটামিন সহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে।

আমরা আজকের আর্টিকেলে দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও দুধের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। এছাড়াও সাথে একটি মজার তথ্য জানবো তা হল বিশ্ব দুগ্ধ দিবস কবে? তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের আর্টিকেল শুরু করা যাক।

দুধ খাওয়ার উপকারিতা

দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ খাওয়ার উপকারিতা

দুধ খেলে কি কি উপকার হয়? এমন সাতটি উপকারের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো।

দুধ হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে

দুধ ক্যালসিয়ামের একটি অন্যতম প্রধান উৎস। আর এই ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় এবং দাঁতের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের হাড়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্যালসিয়াম জমা হয়। এরপর থেকে আর ক্যালসিয়াম জমা হয় না বরং পর্যায়ক্রমে ক্যালসিয়াম ক্ষয় হতে থাকে। এই জন্য যারা নিয়মিত দুধ পান করেন তাদের হাড় দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়াও, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে তৈরি হয় অস্টিওপরোসিস এবং দাঁতের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এই সকল রোগ প্রতিরোধের জন্য দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুধ আমাদের পেশী সুস্থ রাখে

দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন। প্রয়োজনীয় নয় ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডের উৎস দুধে থাকা এই প্রোটিন। এগুলা আমাদের শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না এবং পাশাপাশি পেশী সবল রাখে। এমন কি আমাদের পেশির কোষ মেরামত করতে সাহায্য করে। আপনি এই সকল উপকারের জন্য নিয়মিত দুধ পান করতে পারেন।

শিশুর বিকাশে দুধের ভূমিকা 

শিশুর বিকাশে দুধের ভূমিকা অপরিহার্য। শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য দুধে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ভীষণ প্রয়োজনীয়। আপনার শিশুকে দুই বছরের পর থেকে নিয়মিত দুধ খেতে দিন। শিশুর মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশের সহায়তার জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়ার বিকল্প নেই।

দুধ শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখে

দুধ আমাদের শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। দুধে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট থাকে যা আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করে। তাই আপনি ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগলে এক গ্লাস দুধ পান করে নিন।

দুধে ভিটামিন ও মিনারেল

দুধ এমন একটি পুষ্টিকার খাবার যেটাতে মেলে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান। দুধে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে। দুধে কি কি ভিটামিন পাওয়া যায়? দুধে রয়েছে ভিটামিন D ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে। ভিটামিন B12 রক্ত কণিকা গঠনে এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। ভিটামিন A ত্বক ও চোখ ভালো রাখে এবং পাশাপাশি শরীরের বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও দুধে রয়েছে রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন B2) এবং নায়াসিন (ভিটামিন B3) ইত্যাদি। এখন দুধে থাকা কিছু মিনারেল সম্পর্কে বলবো।

ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের সুস্থ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পটাসিয়াম হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফসফরাস হাড়ের গঠন এবং কোষের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। জিঙ্ক স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে কাজ করে। সেলেনিয়াম বিপাক নিয়ন্ত্রণ এবং কোষের সুরক্ষায় কাজ করে। দুধের এই সকল পুষ্টি উপাদানই শেষ নয় এগুলো ছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

দুধ হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

আপনি যদি প্রতিদিন দুধ পান করেন তাহলে হার্ট ভাল থাকে।কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেলে রক্তের মধ্যে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। আপনার হার্ট ভাল রাখতে প্রতিদিন দুধ পান করুন।

দুধ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

দুধ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকাই আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে দুধ ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

দুধ খেলে কি কি ক্ষতি হয়?

অনেকেই প্রতিদিন প্রচুর দুধ পান করেন, কিন্তু অতিরিক্ত দুধ খাওয়া ঠিক নয়। দৈনিক এক বা দুই গ্লাস দুধ খাওয়া স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর। তবে দুধের উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত খেলে ক্ষতিও হতে পারে। তবে হিসাব করলে দেখা যায়, দুধের উপকারিতাই বেশি। দুধ খাওয়ার বিষয়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যাদের কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা আছে। দুধ খেলে কি কি ক্ষতি হয় চলুন জেনে নিয়ে যাক।

এলার্জি: দুধে যাদের এলার্জি রয়েছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দুধ খাবেন।

ল্যাক্টেজ: শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ এনজাইমের অভাব থাকলে, তাদের দুধ খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দুধ খাওয়া উচিত।

গ্যাস্ট্রিক: গ্যাস্ট্রিক বা পাকস্থলীর আলসার থাকলে, দুধ খেলে পেটের ব্যথা এবং ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

কিডনিতে পাথর: কিডনিতে পাথর থাকলে, দুধ কম খেতে হবে এবং বিশেষ করে রাতে না খাওয়াই ভালো।

অপারেশন: অপারেশনের পর সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দুধ না খাওয়াই ভালো, তবে সুস্থ হওয়ার পর ধীরে ধীরে দুধ খাওয়া যেতে পারে। এবং ডাক্তার যদি বলে তাহলে অপারেশনের পর দুধ খেতে পারেন।

দুধের উপসংহার

আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং দুধ খেলে কি কি ক্ষতি হয় তাও জানতে পেরেছেন। একটা মজার তথ্য আপনি কি জানেন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস কবে? ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম দিন দুগ্ধ দিবসটি পালিত হয়। এবং আগামী বছরের Sun, Jun 1, 2025 তারিখে আবার দিবসটি। আজকে আর্টিকেলে থাকা সকল তথ্য ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।

দুধ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে এই আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি অবশ্যই শেয়ার করবেন। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানান। আপনার কমেন্টের দ্রুত রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব। আপনি যদি আরও এরকম নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে চান তাহলে ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে ফলো করতে পারেন। সবাই সুস্থ থাকবেন!


Leave a Comment