আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আজকের এই ব্লগে আলোচনা করব কিভাবে ২০২৪ সালে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করবেন। শুরুতেই জেনে নেয়া যাক বয়স্ক ভাতা কি? বয়স্ক ভাতা হলো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গরিব বয়স্কদের আর্থিক সহযোগিতা, যারা কাজ করতে অক্ষম বার্ধক্য জনিত কারণে কাজ করতে পারে না তাদের জন্য বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়।
যুগের তালে তালে সবকিছু আপডেট হয়ে যায়, ঠিক তেমনি নতুন নিয়মে বয়স্ক ভাতা অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং স্বচ্ছ করা হয়েছে। একটা সময় বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হতো, তাদের মনঃপুত না হলে বয়স্ক বার্তা পাওয়া যেত না।
কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে আপনি ঘরে বসে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই ব্লগে, আমরা নতুন নিয়মে বয়স্ক ভাতার অনলাইনে আবেদন করার নিয়মাবলি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করবো। যেন আপনি সহজেই বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে পারেন।
সূচিপত্রঃ
সহজে বয়স্ক ভাতার অনলাইনে আবেদন করুন:
সহজে বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ ১ঃ বয়স্ক ভাতার আবেদনের জন্য আপনার ডেক্সটপ কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যেকোনো ব্রাউজার ব্যবহার করে ভিজিট করুন:https://mis.bhata.gov.bd একাউন্ট তৈরি করে নির্বাচন করুন বক্স থেকে বয়স্ক ভাতা নামে একটি অপশন পাবেন সেটি সিলেক্ট করবেন। জেনে রাখা ভালো, প্রতিবছর ওয়েবসাইট আপডেট করা হয় কোন কারণবশত ওয়েবসাইট আপডেট হলে এই অপশনগুলো নিজে খুঁজে বের করুন।
ধাপ ২ঃ দ্বিতীয় ধাপে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য আপনার NID কার্ড দিয়ে ভেরিফাই প্রসেস কমপ্লিট করুন। প্রথমে আপনার এনআইডি কিংবা জন্ম নিবন্ধন এর নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে যাচাই করুন অপশন এ ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ দ্বিতীয় ধাপটি কমপ্লিট করার পর লক্ষ্য করুন তৃতীয় ধাপে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের যে তথ্যগুলো আছে সেগুলো অটোমেটিকলি পূরণ হয়ে গেছে। যেগুলো পূরণ হয়নি আপনি সেগুলো নিজে পূরণ করে দিন পরিচয় পত্র অনুযায়ী।
ধাপ ৪ঃ চতুর্থ ধাপে আপনার কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে যেমনঃ
- বৈবাহিক অবস্থা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- পেশা
- বার্ষিক আয়
- সরকারি কোন আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন তার তথ্য
- জমির পরিমান
- স্বাস্থ্যগত তথ্য
- ভূমির পরিমান ইত্যাদি।
এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে আপনার আত্মিক সচ্ছলতা এবং আপনি এই বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিনা সেটা যাচাই করা হবে তাই সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।
ধাপ ৫ঃ প্রয়োজনীয় যোগাযোগের তথ্য আপলোড করুন
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে যে যোগাযোগ তথ্য আছে আপনার গ্রাম, ঠিকানা বিস্তারিত লিখুন। মোবাইল ব্যাংকিং এর যে কোন একটা একাউন্ট দিতে হবে। বিকাশ কিংবা নগদ একাউন্ট টাকা বাধ্যতামূলক।
ধাপ ৬ঃ ৬ নম্বর ধাপে আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার তত্ত্ব দিতে হবে। কেন আপনি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য? সেটা তাদেরকে বোঝাতে হবে তার জন্য ছয় নম্বর স্টেপটি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করুন। একবার সেভ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর এডিট করতে পারবেন না তাই গুরুত্ব সহ তথ্য আপলোড করুন।
ধাপ ৭ঃ অনলাইনে আবেদন শেষ হলে আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করুন। আপনার নিকটবর্তী চেয়ারম্যান কিংবা সমাজসেবক অধিদপ্তরে যোগাযোগ করুন। আবেদন ফরমটি তাদের কাছে জমা দিন।
বলে রাখা ভালো: বয়স্ক ভাতা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সরকারি সুরক্ষা কর্মসূচি, যা দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে ৫ কোটি জনসংখ্যা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে যার ফলে এ বয়স্ক ভাতার সবার কপালে জোটেনা। হতাশ হবার কিছু নেই আপনি চেষ্টা করে দেখুন, বাকিটা আল্লাহ ভরসা কপাল ভালো থাকলে পেয়ে যাবেন।
বয়স্ক ভাতা কি এবং কেন করা হয়?
বয়স্ক ভাতা হলো একটি সুরক্ষা ভাতা, যা নির্দিষ্ট বয়সের ঊর্ধ্বে থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে যেন একজন বয়স্ক ব্যক্তি আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকতে পারে।বিশেষ করে হতদরিদ্র পরিবারের কোন ব্যক্তি বৃদ্ধকালে অনেক অবহেলিত হয়ে থাকে। তাদের জন্য এই বয়স্ক ভাতা অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই ভাতার মূল উদ্দেশ্য হলো বয়স্ক ব্যক্তিদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করা, যাতে তারা বয়সজনিত অসুস্থতা ও আর্থিক মন্দার সময় সহজেই জীবন যাপন করতে পারেন। যদিও বাংলাদেশে সবাইকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া এখনো সম্ভব হচ্ছে না। আশা করা যায় বাংলাদেশ উন্নয়ন হওয়ার সাথে সাথে বয়স্ক ভাতা সংখ্যাও কমে আসবে এবং যারা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য তারা সকলেই পাবে।
বয়স্ক ভাতা মাসে কত টাকা?
বর্তমানে ৫০০ টাকা প্রতি মাসে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয় কিন্তু এই টাকা টা পর্যাপ্ত পরিমাণ নয় কারণ এখন সকল কিছু দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমাসে ৫০০ টাকা দিয়ে চা খাওয়ার খরচ হয় না। তাও আবার দেখা যায় ৩-৪ মাস পর পর দেওয়া হয়। অনেক সময় এক বছর পার হয়ে যায়, একসাথে টাকা দেওয়া হয় ।
বয়স্ক ভাতা কত বছর বয়সে দেওয়া হয়?
বাংলাদেশ সরকারি আইন অনুযায়ী নারী ৬২ বছর, পুরুষ ৬৫ বছর হলে তারা বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে।
বয়স্ক ভাতার টাকা কবে আসবে?
কথা ছিল প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা জনিত কারণে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা আসে না। যাই হোক বয়স্ক ভাতা যে কোন একটা নির্দিষ্ট তারিখে সরাসরি প্রাপকের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং
বর্তমান ডিজিটাল যুগ সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে গেছে, তাই বয়স্ক ভাতা হাতে পাওয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। যার ফলস্বরূপূপ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে বয়স্ক ভাতা ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে। আপনি যখন বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করবেন তখন নগদ কিংবা বিকাশ নাম্বারের একাউন্ট দিতে হবে। অবশ্যই মোবাইল ব্যাংকিং এর পিন নাম্বারটা মনে রাখবেন না হয় টাকা উত্তোলন পারবেন না।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলি
বর্তমানে বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতার জন্য অনেক কিছু শর্ত বিবেচনা করা হয় যেমন: যোগ্যতা, শর্তাবলি এবং অন্যান্য তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- বয়স: পুরুষদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬২ বছর বয়স হতে হবে।
- আয়ের সীমা: দরিদ্র বা অতিদরিদ্র হতে হবে।
- নাগরিকত্ব: বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
- অন্য কোনো ভাতা নয়: কোনো সরকারি ভাতা বা পেনশন পাওয়া যাবে না।
বয়স্ক ভাতার অযোগ্যতার কারণ
১. সরকারি চাকরি:যারা সরকারি চাকরি করে তারা বয়স্ক ভাতা পাবে না কারণ তারা পেনশন ভোগ করবে। যারা পেনশন ভোগ করে তারা কখনো বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে না।
২. অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী: অনেকে ৫০০ টাকার লোভ সামলাতে পারে না দেখা যাচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকার পরেও অন্যের হক নষ্ট করে এবং ভুল তথ্য দিয়ে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করে এটা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
৩. বিদেশে অবস্থানরত: কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে নাগরিক হয় কিন্তু সে বাংলাদেশে বসবাস করে না ওই ব্যক্তি বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে না।
কত বছর বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাওয়া যায়?
একজন নারী ৬২ বছর হলে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর বয়স হলে বয়স্ক বার্তার জন্য আবেদন করতে পারবে।
বয়স্ক ভাতা কত সালে চালু হয়?
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বয়স্ক ভাতা ১৯৯৮ সালে চালু হয়। কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয় বাংলাদেশের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তা খুবই অতি নগণ্য।
বয়স্ক ভাতার টাকা দেখার নিয়ম
বয়স্ক ভাতার যেহেতু মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় তাই নিজের মোবাইল ফোনে মোবাইল ব্যাংকিং এর সেবা ব্যবহার করে বয়স্ক ভাতা দেখা যায়। কিন্তু অনেকে বয়স হওয়ার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং এর পিন নাম্বার ভুলে যান, তার জন্য নিকটস্থ বিশ্বস্ত আত্মীয় কিংবা নিজের পরিবারের কাউকে পিন নাম্বার মনে রাখতে বলুন।
বয়স্ক ভাতা হত দরিদ্রদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় সেবা। সাধারণ মানুষের জন্য ৫০০ টাকা তেমন কিছুই নয় কিন্তু একজন হতদরিদ্র ব্যক্তির জন্য ৫০০ টাকা অনেক কিছু। আশা করি আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন শিখতে পেরেছেন। আপনি যদি নিত্যনতুন ব্লগ পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ভিজিট করুন।