মোটা হওয়ার উপায় – ওজন বৃদ্ধির কার্যকরী টিপস

আমরা কমবেশি সবাই ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করে থাকেন। কিন্তু এমন অনেকেই রয়েছেন যারা মোটা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। শরীরের অতিরিক্ত ওজন অনেক ক্ষতির কারণ। ওজন বেশি হলে শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। আবার অতিরিক্ত রোগা পাতলা হওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। অনেকেরই বয়স অনুযায়ী ওজন কম হয়ে যায়।

অনেকে মোটা হওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন উপকার পায় না। বয়স অনুযায়ী উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হওয়া বা আন্ডারওয়েট হওয়া খুবই সমস্যার ব্যাপার। তাই আজকে জানবো মোটা হওয়ার উপায় সম্পর্কে। কিন্তু, তার আগে ওজন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। কারণ কোন সমস্যার সমাধান জানার আগে ওই সমস্যার কারণগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।

ওজন কম হওয়ার কারণ

ওজন কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, জেনেটিক কারণ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, ডায়রিয়া, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, এইডস, হাইপারথাইরয়েডিজম, আর্থ্রাইটিস, যক্ষ্মা, কিডনির সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা এবং ড্রাগ নেওয়া ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এছাড়া, বয়সের কারণেও ওজনের পরিবর্তন ঘটে।

হরমোন ও বিপাকজনিত সমস্যার মধ্যে ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, অ্যাডিসনস ডিজিজ এবং প্যান হাইপো পিটুইটারিজমের মতো রোগগুলো ওজন কমানোর কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ যেমন যক্ষ্মা, কালাজ্বর, লিভার অ্যাবসেস এবং এইডসের মতো রোগে স্বল্প সময়ের মধ্যে ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথমে এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

 

মোটা হওয়ার উপায় কি কি

মোটা হওয়ার উপায় কি কি
মোটা হওয়ার উপায় কি কি

চলুন জেনে নেয়া যাক মোটা হওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে।

ডিম: এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে ডিম কে প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিন বলা হয়। ডিম আপনি সকল ধরনের খাবারের সাথে খেতে পারেন। আপনি প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে তিনটি করে ডিম খেতে পারেন। শুধু যে সকালে নাস্তার সাথে খেতে হবে এর কোন মানে নেই। আপনি যেকোনো সময় খেতে পারেন দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাত্রে।

দুধ ও মধু: গরম দুধের সাথে মধু খেলে অনেক দ্রুত ওজন বেড়ে যায়। আপনি চাইলে সকালে এবং সন্ধ্যার সময় গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

কলা: প্রথমেই রয়েছে কলা। ওজন বাড়ানোর জন্য সবথেকে ভালো খাবার হলো কলা। ওজন বাড়ানোর সবথেকে সহজ এবং কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত কলা খাওয়া। যদি আপনি প্রতিদিন তিনটি করে কলা গ্রহণ করেন তাহলে দ্রুতই আপনার ওজন বেড়ে যাবে।

দই: দুপুরে খাবারের শেষে আপনি একবাটি টকটাই খেয়ে নিতে পারেন। টক দই মূলত দুধ থেকে তৈরি করা হয় তাই এতে দুধের সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। শুধুমাত্র দুধের পুষ্টি থাকেনা বরং এতে বিভিন্ন গুড ব্যাকটেরিয়া থাকে। কিন্তু মিষ্টি দই এড়িয়ে চলুন।

শর্করা জাতীয় খাবার: শর্করা ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই আপনার খাবার তালিকায় অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার রাখুন। ভাত,রুটি শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের প্রধান উৎস। ভাত, রুটিতে কার্বোহাইটেড বেশি তার মানে এই না যে বেশি বেশি খাবেন। অতিরিক্ত ফ্যাটের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই প্রতিদিন কার্বোহাইডেট পরিমিত পরিমাণে যা খান তার থেকে কিছুটা বেশি কার্বোহাইডেট খান। এটা মোটা হওয়ার উপায় হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।

বাদাম: আমরা কমবেশি সবাই বাদাম খেতে পছন্দ করি। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য বাদাম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, চীনা বাদাম আপনার সুবিধামতো যে কোন বাদাম খেতে পারেন। বাদামের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে মিনারেল আছে এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল করবেন যে বাদামের সাথে অন্য কোন কিছু মিশানো আছে কিনা। আপনি চেষ্টা করবেন একদম ফ্রেশ বাদাম গ্রহণ করার।

কিসমিস: কিসমিস আপনার ওজন বাড়ানোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিসমিস যেহেতু আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয় তাই অল্প পরিমাণ কিসমিসে অনেক ভিটামিন রয়েছে। এক মুঠো কিসমিস সারারাত ভিজিয়ে সকালে বাদামের সাথে খেতে পারে।

টেনশন ফ্রি থাকুন: সব সমস্যার বড় সমস্যা হল টেনশন করা। আজকের সময় টেনশন মুক্ত থাকা খুবই কঠিন তাও চেষ্টা করবেন টেনশন মুক্ত থাকার। ওজন বৃদ্ধিতে যেমন টেনশন ফ্রি থাকা প্রয়োজন ঠিক তেমনি ওজন কমাতেও টেনশন ফ্রি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন: মোটা হওয়ার উপায় এর মধ্যে হলো প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। ওজন বৃদ্ধি করার জন্য শুধু ক্যালরি যথেষ্ট নয় পাশাপাশি সঠিক প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। যদি সঠিক প্রোটিন না গ্রহণ করেন তাহলে ক্যালরি বাড়তি ফ্যাটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, মাংস, ডাল ও দুধ অবশ্যই রাখবেন।

ঘুম: পরিমিত ঘুমান, আমাদের শরীর এবং মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন অবশ্যই ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এর থেকে কম হওয়া যাবে না। এছাড়াও আপনি চাইলে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে ইয়োগা করতে পারেন এতে আপনার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

 বাহিরের খাবার: সচরাচর আমরা সবাই জানি বাইরের খাবার না খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু ওজন বৃদ্ধিতে বাহিরের খাবার যেমন আইসক্রিম, পেস্ট্রি, বার্গার ইত্যাদি খাবার খুবই কার্যকরী। এই ধরনের খাবারে ফ্যাট থাকে যা বেশি খেলে শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই আপনি চাইলে এ ধরনের বাইরের খাবার মাঝে মাঝে খেতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই খাবারটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয়েছে কিনা নিশ্চিত করে খেতে পারেন। মোটা হওয়ার উপায় এর মধ্যে আপনি এটা শেষে চেষ্টা করতে পারেন।

খাবার গ্রহণ করুন: মোটা হওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে শেষ আরো একটি উপায় বলবো তা হলো বারবার খাবার গ্রহণ করুন। প্রতিটি মানুষেরই উচিত বার বার খাবার গ্রহণ করা। আপনি প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর অল্প কিছু করে খেতে পারেন। কিন্তু, যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন তারা প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর বেশি করে খেতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনার শরীরে পুষ্টির পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি পাবে।

উপসংহার

ওজন কমানোর উপায় নিয়ে আজকের আর্টিকেল এই পর্যন্ত। আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মোটা হওয়ার উপায় কি কি, ওজন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। উপরে বলা নিয়মগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধি করার। আপনার কাছে যদি আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন।

যদি আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন আমরা দ্রুত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। এবং এরকম আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ফলো করতে পারেন। মোটা হওয়ার উপায় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!

Leave a Comment