স্যাটেলাইট কী? স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে বিস্তারিত জেনে নিন

স্যাটেলাইট কী?

স্যাটেলাইট হলো একধরনের আধুনিক প্রযুক্তি যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে মহাকাশে স্থাপন করা হয় এবং পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাধারণত যোগাযোগ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, নেভিগেশন, এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণকারী স্যাটেলাইটগুলো তথ্য আদান-প্রদান, গবেষণা, এবং পর্যবেক্ষণ কাজে ব্যবহার করা হয়।

স্যাটেলাইটের প্রকারভেদ এবং ব্যবহার

স্যাটেলাইটের কার্যক্ষমতা এবং ব্যবহার অনুযায়ী বিভক্ত করা যায় নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো:

  1. যোগাযোগ স্যাটেলাইট: যোগাযোগ স্যাটেলাইট প্রধানত টেলিভিশন, রেডিও, এবং ইন্টারনেট সেবার কাজে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এটি বিভিন্ন স্থানে সিগন্যাল পৌঁছে দিতে সাহায্য করে, যা বড় বড় ডিশ অ্যান্টেনা দিয়ে ধরা হয়। বর্তমানে ইন্টারনেট স্যাটেলাইট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে যদিও এই সেবা এখনো বাংলাদেশে চালু হয় নাই।
  2. আবহাওয়া স্যাটেলাইট: আবহাওয়া স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, মেঘ, এবং অন্যান্য আবহাওয়া উপাদান পর্যবেক্ষণ করা হয়।আবহাওয়া স্যাটেলাইট আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ধারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এটি মূলত রাষ্ট্রীয় কাজে আবহাওয়া সংক্রান্ত বার্তা দেওয়ার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়।
  3. নেভিগেশন স্যাটেলাইট: নেভিগেশন স্যাটেলাইট GPS সেবার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থানের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করা এবং যেকোনো বিষয়বস্তু লাইভ ট্র্যাক করা যায়। নেভিগেশন স্যাটেলাইট এটি ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক রুট নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে অপরাধী কিংবা সন্ত্রাসীদের লোকেশন ট্র্যাক করার জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
  4. গবেষণা স্যাটেলাইট: গবেষণা স্যাটেলাইট মহাকাশ গবেষণা এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর, এবং অন্যান্য তত্ত্ব সংগ্রহের ব্যবহার করা হয়।বিশেষ করে মহাবিশ্বের বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণার কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।

স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

যত দিন যাচ্ছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে ‘ন্যানোস্যাটেলাইট’ এবং ‘কিউবস্যাট’ এর মতো ছোট আকারের স্যাটেলাইটগুলো গবেষণা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করছে এবং এর পাশাপাশি এর কার্যকরী ভূমিকাও ব্যাপক। আশা করা যায় ২০৫০ সালের মধ্যেই মহাকাশে বৃহৎ স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে যা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারবে এবং তার বিহীন ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া, মহাকাশ পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার জন্য স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার আরো দিন দিন বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অজানা রহস্য উদঘাটন করতে পারবে।

স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?

কিভাবে কাজ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা? বর্তমানের ডিজিটাল স্যাটেলাইট গুলো মূলত তিনটি ধাপে কাজ করে:

  1. উৎক্ষেপণ: প্রথমে স্যাটেলাইটকে মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয় যেন এটি সঠিকভাবে কাজ করে।
  2. সংকেত প্রেরণ: পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত স্থল স্টেশন থেকে সংকেত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় এবং পৃথিবীতে বসে স্যাটেলাইট স্টেশনের মাধ্যমে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করে। 
  3. সংকেত পুনরায় প্রেরণ: কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করে সেই সংকেত প্রক্রিয়াকরণ করে আবার  নির্দিষ্ট স্থানে প্রেরণ করে, যা স্যাটেলাইট স্টেশন এর রিসিভার ডিভাইস দ্বারা ধরা হয়।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ

স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দুর্লভ এলাকায় ইন্টারনেট সেবা প্রদানে স্যাটেলাইট ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। যেখানে ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছানো কঠিন, বা যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব নয় সেইসব এলাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুত ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা যেতে পারে। ‘স্টারলিংক’ এর মতো সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে আশা করা যায় দিন দিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন – ক্লাউড কম্পিউটিং কী?

স্যাটেলাইটের ইতিহাস ও বিবর্তন

ইতিহাসে সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে স্যাটেলাইট ব্যবস্থা প্রযুক্তি শুরু হয়, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম মানবসৃষ্ট স্যাটেলাইট ‘স্পুটনিক-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে এবং সফল অভিযান প্রেরণে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং আস্তে আস্তে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এর সফলতার মুখ দেখতে পায়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট ‘টেলস্টার-১’ উৎক্ষেপণ করে, যা টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয় এটি বিশ্বের সর্বপ্রথম স্যাটেলাইটে সম্প্রচার করার মাধ্যম। স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আজকের দিনের মহাকাশ গবেষণা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, মানুষ দিন দিন মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটন করে চলেছে। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র স্যাটেলাইটের ফলে।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস

বর্তমানে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পৃথিবীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ধারণ করা হয়। কতদিন রোদ, বৃষ্টি হতে পারে, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকলে সতর্কতা প্রদান করে এই স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে। তথ্য গুলোর উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন যা আমাদের জীবনে যেকোনো বিপদ এড়ানোর জন্য কাজে লাগে।

স্যাটেলাইট নেভিগেশন

স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম GPS (Global Positioning System) ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো স্থানে সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম। বর্তমানে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আমরা এই সেবা সহজে পেয়ে থাকি। সেটেলাইট নেভিগেশন সেবা অতি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে পরিবহন, সামরিক, এবং জরুরি কাজে ব্যবহৃত হয়। স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সঠিক রুট নির্ধারণ এবং পথ নির্দেশনা পাওয়া সম্ভব কিংবা কোন কিছু ট্র্যাকিং করার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমানে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং আধুনিক বিশ্বের অনেক সুবিধা এই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে স্যাটেলাইটের প্রভাব আরও বিস্তৃত হবে, আমাদের যে কোন সমস্যা সহজে সমাধান করা যাবে এবং আমাদের জীবনে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এই স্যাটেলাইট ব্যবস্থা।

Leave a Comment