হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের খাদ্য অভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তের কলস্টেরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এখন আপনি যদি কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খান তাহলেও আবার রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যাবে।
তাই আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে কিছু হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই ক্ষতিকর খাবারগুলো আমাদের রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং শারীরিক জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে। আমরা এই আর্টিকেল থেকে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জানবো যেগুলো হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার। কিন্তু তার আগে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
সূচিপত্রঃ
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়
হার্টের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করার দরকার হয়। হার্ট অ্যাটাক হলে কোনো এক বা একাধিক রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে হার্টে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। হার্টের রক্তনালির গায়ে চর্বি জমা হওয়ার কারণে রক্তনালি সরু হয়ে যায়। এবং সরু রক্তনালিতে রক্তের জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার

তৈলাক্ত জাতীয় খাবার
হার্টের জন্য সবথেকে খারাপ এবং বিপদজনক খাবার হল তৈলাক্ত জাতীয় খাবার। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে তেলে ভাজা সকল খাবার বর্জন করুন। বিভিন্ন তেলে ভাজা খাবার হতে পারে যেমন আলুর চপ, ডিমের চপ, সিঙ্গাড়া, পিয়াজু,পকোড়া ইত্যাদি। এছাড়াও চাওমিন বা বিরিয়ানির মতো রেস্টুরেন্টে প্রস্তুত খাদ্য সামগ্রী বর্জন করতে হবে। কারণ এই সকল খাবারের প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট রয়েছে। আর এই ট্রান্স ফ্যাট হার্টের জন্য সবথেকে বেশি ক্ষতিকর।
লাল মাংস বর্জন করুন
লাল মাংস বা রেড মিট খেতে সুস্বাদু হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ রেডমিটে রয়েছে প্রচুর এলডিএল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার জন্য রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই যদি কারোর হার্টের সমস্যা থাকে বা সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাহলে খাবার তালিকা থেকে লাল মাংস বা রেড মিট বাদ দেন। আর যদি খেতেই চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ফাস্টফুড হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার
আমরা কমবেশি সবাই জানি ফাস্টফুড স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন জার্নালের রিপোর্টে দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিত ফাস্ট ফুড খান, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ২০% বেশি। এছাড়াও যারা সপ্তাহে একের বেশি বার ফাস্টফুড খান অর্থাৎ, দুই/তিন বার। তাদের হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ৫০% বেশি। শুধু তাই না বরং, সপ্তাহে যারা চার বা তার চেয়েও বেশি বার ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকেন, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৮০% এরও বেশি হয়ে থাকে। তাই আজকেই বাদ দেন ফাস্টফুড খাওয়া।
হার্ট সুস্থ রাখতে লবণ পরিমিত খান
লবণ বেশি খেলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। যার জন্য বৃদ্ধি পায় হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম বা এক চামচের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। তাই আপনি যদি এর আগে অতিরিক্ত লবণ খেয়ে থাকেন তাহলে এখন থেকেই সাবধান হয়ে যান এবং পরিমাণমতো লবণ গ্রহণ করুন।
ডিম কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর
ডিম হার্টের রোগীর জন্য কি ক্ষতিকর এই প্রশ্ন অনেকের মনে আসে। হৃদরোগীদের জন্যে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ ডিমের কুসুমে রয়েছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। একজন হৃদরোগীর জন্য দিনে ২০০ মিলিগ্রামের কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়। আর একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই রয়েছে কুসুমে।
জাঙ্কফুড বর্জন করুন
পিৎজা, বার্গার সহ চাইনিজ সকল খাবার বাদ দেন। বিভিন্ন ধরনের চাইনিজ সসে প্রিজারেটিভ এর পরিমাণ এতটাই বেশি থাকে যে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয় যার মধ্যে রয়েছে হার্টও। পিৎজা এবং বার্গারে রয়েছে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম ও ফ্যাট যা অবেসিটি বাড়িয়ে হার্টের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও জাঙ্কফুড তৈরিতে যে সকল তেল ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই হার্টের রোগী বা সুস্থ মানুষ সবার উচিত জাঙ্কফুড বর্জন করা।
মিষ্টি জাতীয় খাবার
মিষ্টি জাতীয় খাবার কেক, পেস্ট্রি আইসক্রিম এর মত প্রতিটি খাবারই চিনিযুক্ত। খাবারের এই অতিরিক্ত সুগার ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হয়। যার ফলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে হৃদরোগ সহ অন্যান্য বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আপনার যদি এই সকল মিষ্টি জাতীয় খাবার কেক, আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে আজই অর্জন করুন।
প্রক্রিয়াজাত মাছ ও মাংস
যেকোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এগুলোর কোনোটিই হার্টের জন্য তো ভালো নয় বরং আমাদের শরীরের জন্যও ভালো না। শুধু অভিসিটিই নয় হঠাৎ, হার্ট অ্যাটাকের জন্য এই সকল খাদ্য দায়ী। এই ধরনের খাবার সহজেই হৃদয়কে দুর্বল করে তোলে। তাই বলবো এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
কোলেস্টেরল কি হৃদরোগের কারণ হতে পারে?
হ্যাঁ, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কোলেস্টেরল জমে রক্তনালি সরু হয়ে যায়, যা হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
হার্ট অ্যাটাক হয় যখন কোনো রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণে হার্টের মাংসপেশিতে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না এবং রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।
তৈলাক্ত খাবার কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
হ্যাঁ, তৈলাক্ত খাবার হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য বিপদজনক।
রেড মিট কি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?
হ্যাঁ, রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে এলডিএল কোলেস্টেরল থাকে, যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ফাস্টফুড কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
হ্যাঁ, ফাস্টফুড হার্টের জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত ফাস্টফুড খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লবণ কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?
বেশি লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। দৈনিক ৬ গ্রাম লবণের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
ডিম কি হার্টের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর?
ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে, তবে কুসুমে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকায় তা এড়িয়ে চলা উচিত।
জাঙ্কফুড কেন হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
জাঙ্কফুডে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও ফ্যাট থাকে, যা হার্টের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
মিষ্টিজাতীয় খাবার কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
হ্যাঁ, মিষ্টিজাতীয় খাবারে অতিরিক্ত চিনির কারণে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার কি হার্টের জন্য ক্ষতিকর?
প্রক্রিয়াজাত খাবারে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক হার্টের জন্য ক্ষতিকর এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
হার্টের জন্য সুস্থ থাকতে কী ধরণের খাবার বর্জন করা উচিত?
তৈলাক্ত, লাল মাংস, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকর, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ট্রান্স ফ্যাট কীভাবে হার্টের ক্ষতি করে?
ট্রান্স ফ্যাট রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমতে সাহায্য করে, যা রক্ত চলাচল বন্ধ করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য কী করতে হবে?
খাদ্যতালিকা থেকে কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে কীভাবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত?
তৈলাক্ত খাবার, ফাস্টফুড, এবং লাল মাংস কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য বেছে নিন।
লবণ কম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কীভাবে কমানো যায়?
লবণের পরিমাণ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।